ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার জ্বালানি অবকাঠামোকে লক্ষ্য করে নতুন করে নিষেধাজ্ঞার অনুমোদন দিয়েছে, যা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে মস্কোর সক্ষমতা সীমিত করতে যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ প্রচেষ্টার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বর্তমানে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সভাপতিত্বকারী দেশ ডেনমার্কের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই নতুন পদক্ষেপ অনুযায়ী ২০২৭ সাল থেকে রাশিয়া থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (LNG) আমদানি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হবে। পাশাপাশি, দুটি প্রধান রাশিয়ান তেল কোম্পানির সঙ্গে লেনদেনে নতুনভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে এবং তথাকথিত শ্যাডো ফ্লিটের আরও অতিরিক্ত 117টি জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে, যেগুলো রাশিয়াকে পূর্ববর্তী নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করেছে।
রুশ জ্বালানি সম্পদের ওপর নির্ভরতা কমানোর বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের এই সিদ্ধান্ত একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে একাধিক চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে।
প্রথমত, গ্যাস সরবরাহের ঘাটতি এবং জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধির ঝুঁকি এড়াতে বিকল্প এলএনজি সরবরাহ উৎস নিশ্চিত করতে হবে। দ্বিতীয়ত, শ্যাডো ফ্লিটের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা কঠোর করার ফলে রাশিয়ার কাছ থেকে পাল্টা প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা তৈরি হতে পারে এবং এর ফলে উত্তেজনা আরও তীব্র হতে পারে।
এছাড়াও, ইউরোপীয় ভোক্তাদের ওপর এই পদক্ষেপের সম্ভাব্য প্রভাব বিবেচনায় নেওয়া জরুরি — বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তের মতো ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর জন্য, যাদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ।
সামগ্রিকভাবে, রাশিয়ার জ্বালানি খাতের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করার এই সিদ্ধান্ত ইউরোপীয় দেশগুলোর শক্তিশালী জ্বালানি স্বনির্ভরতা অর্জনের এবং ইউক্রেন ইস্যুর পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার অর্থনীতির ওপর চাপ বৃদ্ধি করার প্রবল প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত করে। তবে, এই পদক্ষেপের কার্যকারিতা নির্ভর করবে একাধিক বিষয়ের ওপর — যেমন বিকল্প জ্বালানির প্রাপ্যতা, ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সমন্বয় এবং রাশিয়ার সম্ভাব্য পাল্টা পদক্ষেপের মুখে তাদের প্রতিক্রিয়া জানানোর সদিচ্ছা।
বৃহস্পতিবার ডেনমার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লার্স লকে রাসমুসেন বলেন, "নিষেধাজ্ঞাগুলো সত্যিকার অর্থেই প্রভাব ফেলছে এবং রাশিয়ার অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।"
এই নিষেধাজ্ঞাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের দ্বারা অনুমোদিত ১৯তম নিষেধাজ্ঞা — তবে অস্ট্রিয়া, হাঙ্গেরি এবং স্লোভাকিয়ার আপত্তির কারণে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করতে কয়েক সপ্তাহ বিলম্বিত হয়েছে।
গতকাল, যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়ার দুটি বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত তেল উৎপাদক কোম্পানি, রোজনেফট এবং লুকঅয়েল-এর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়। এই পদক্ষেপটি এমন এক সময় নেওয়া হল যখন ট্রাম্প–পুতিন সম্মেলন বাতিল করা হয়। এর এক সপ্তাহ আগেই যুক্তরাজ্য রুশ তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ট্রাম্প-পুতিন বৈঠকের সম্ভাবনা ইউরোপীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছিল, কারণ তারা আশঙ্কা করেছিল যে ট্রাম্প হয়তো মাসের পর মাস ধরে রাশিয়াকে প্রকাশ্যে নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুমকি দেওয়ার পর হঠাৎ করে পুতিনের প্রতি নমনীয় অবস্থান গ্রহণ করতে পারেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "রাশিয়ার জ্বালানি খাতকে লক্ষ্যবস্তু করার পাশাপাশি, ৪৫টি কোম্পানির ওপরও ইউরোপীয় ইউনিয়নের নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হচ্ছে, যারা রাশিয়াকে নিষেধাজ্ঞা এড়াতে সহায়তা করেছে — যার মধ্যে রয়েছে চীন এবং হংকং ভিত্তিক ১২টি কোম্পানি।"
এছাড়াও, এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় রাশিয়ার ইলেকট্রনিক পেমেন্ট সিস্টেম এবং বেলারুস, কাজাখস্তানের মতো তৃতীয় দেশগুলোতে কার্যক্রম পরিচালনারত রুশ ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস — EUR/USD
বর্তমানে ইউরোর ক্রেতাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে এই পেয়ারের মূল্যকে 1.1620 লেভেলে পুনরুদ্ধার করা। মূল্য কেবল এই লেভেল ব্রেক করে ঊর্ধ্বমুখী হতে পারলেই 1.1650 লেভেল টেস্ট করার সুযোগ তৈরি হতে পারে। এরপর পেয়ারটির মূল্য 1.1700 এর দিকে অগ্রসর হতে পারে, যদিও এটি সফলভাবে করতে হলে মার্কেটের বড় ট্রেডারদের সহায়তার প্রয়োজন হবে। এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.1725 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে।
অন্যদিকে, যদি দরপতন শুরু হয়, তাহলে মূল্য 1.1590 লেভেলে থাকা অবস্থায় ক্রেতারা সক্রিয় হতে পারে। যদি বড় ক্রেতারা সেখানে সক্রিয় না হন, তাহলে পরবর্তী সম্ভাব্য লং এন্ট্রির জন্য হয়ত 1.1545 লেভেল ব্রেকের জন্য অপেক্ষা করতে হবে বা 1.1500 লেভেল থেকে লং পজিশন বিবেচনায় নেয়া যেতে পারে।
টেকনিক্যাল পূর্বাভাস — GBP/USD
পাউন্ডের ক্রেতাদের জন্য লক্ষ্য হবে 1.3360-এ অবস্থিত রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করা। কেবল এটিই এই পেয়ারের মূল্যের 1.3385 এর দিকে মুভমেন্টের সম্ভাবনা উন্মুক্ত করতে পারে, যদিও এই লেভেল অতিক্রম করাও বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। এই পেয়ারের মূল্যের সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হিসেবে 1.3420 লেভেল নির্ধারণ করা যেতে পারে।
যদি এই পেয়ারের দরপতনের হয়, তাহলে মূল্য 1.3320 এরিয়ায় থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করবে। যদি তারা সফল হয় এবং এই রেঞ্জ ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হয়, তাহলে এটি বুলিশ পজিশনের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য আঘাত হতে পারে এবং GBP/USD পেয়ারের মূল্য 1.3280 পর্যন্ত নেমে যেতে পারে, এমনকি 1.3250 পর্যন্তও দরপতন হতে পারে।