স্বর্ণের মূল্য যখন $3,900 লেভেল থেকে ভালোভাবে রিবাউন্ড করে ফের $4,186-এর আশেপাশে পৌঁছেছে, তখন জেপি মরগ্যান প্রাইভেট পূর্বাভাস দিয়েছে যে স্বর্ণের মূল্যের দ্রুত বৃদ্ধির ফলে ২০২৫ সালে এটির মূল্য প্রতি আউন্সে $5,000-এর উপরে চলে যেতে পারে — যার প্রধান কারণ হবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কর্তৃক স্বর্ণ ক্রয়ের প্রবণতা।
জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের শেষ নাগাদ স্বর্ণের দর আউন্স প্রতি $5,200-$5,300 পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে। চলতি বছরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো কর্তৃক স্বর্ণ ক্রয় কার্যক্রমই স্বর্ণের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার মূল কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ নীতিনির্ধারকেরা মূলধন সংরক্ষণ এবং বিনিয়োগ বহুমুখীকরণের উপায় খুঁজছেন। অক্টোবর মাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড ছাড়িয়ে $4,380 পৌঁছানোর পর সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে কিছুটা দরপতন দেখা গেছে। তবে বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের দাম ৫০% এরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে জেপি মরগ্যানের বিশ্লেষকগণ পর্যবেক্ষণ করেছে যে, বহু উদীয়মান অর্থনীতির দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে এখনো স্বর্ণের অনুপাত তুলনামূলকভাবে কম। যদিও উচ্চ দামের কারণে ক্রয়ের গতি কিছুটা ধীর হতে পারে, তবুও স্বর্ণের প্রতি চাহিদা বজায় থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে।
তবে এই আশাবাদী পূর্বাভাসের পেছনে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে। প্রথমত, ফেডারেল রিজার্ভের কঠোর অবস্থানের কারণে মার্কিন ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পেলে সেটি স্বর্ণকে চাপের মধ্যে ফেলতে পারে, কারণ ঐতিহ্যগতভাবে এই দুটি অ্যাসেটের মধ্যে বিপরীতমুখী সম্পর্ক বিদ্যমান। দ্বিতীয়ত, যদি বৈশ্বিক মুদ্রাস্ফীতির হার অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হ্রাস পায়, তবে মুদ্রাস্ফীতির বিরুদ্ধে সুরক্ষা হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগের আগ্রহ কমে যেতে পারে।
পরিশেষে, স্বর্ণের মূল্যের আউন্স প্রতি $5,000-এর লক্ষ্যেমাত্রায় পৌঁছানোর বিষয়টি বেশ কিছু বিষয়ের নির্ভর করবে – যেমন সামষ্টিক অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট, ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি এবং স্বর্ণবাজারে প্রধান ট্রেডারদের ভূমিকার উপর।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে বিশ্বজুড়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো তাদের রিজার্ভে ৬৩৪ টন স্বর্ণ যুক্ত করেছে। যদিও গত তিন বছরের সমপর্যায় তুলনায় এই পরিমাণ কিছুটা কম, তবুও এটি ২০২২ সালের আগের গড় পরিসংখ্যানের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বার্ষিক ভিত্তিতে স্বর্ণ ক্রয়ের মাত্রা ৭৫০ থেকে ৯০০ টনের মধ্যে হবে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে চীন শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে, যারা যুক্তরাষ্ট্র-কেন্দ্রিক আর্থিক বাজারের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করতে চায়। পোল্যান্ড, তুরস্ক ও কাজাখস্তানও তাদের রিজার্ভে ক্রমাগত স্বর্ণ সংযোজন করেছে।
বর্তমানে স্বর্ণের টেকনিক্যাল চিত্র অনুযায়ী, ক্রেতাদের জন্য প্রথম লক্ষ্য হবে $4,296 স্তরের রেজিস্ট্যান্স লেভেল ব্রেক করানো। এতে করে তারা স্বর্ণের মূল্যকে $4,304 লেভেলের লক্ষ্যমাত্রার দিকে নিয়ে যেতে সক্ষম হবে — যদিও এই লেভেল ব্রেক করে স্বর্ণের মূল্যের ঊর্ধ্বমুখী হওয়া বেশ চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। সর্বোচ্চ লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে $4,372 লেভেল। যদি স্বর্ণের দরপতন, তাহলে মূল্য $4,186 লেভেলের আশেপাশে থাকা অবস্থায় বিক্রেতারা মার্কেটের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করবে। এই লেভেল ব্রেক করে মূল্য নিম্নমুখী হলে, সেটি ক্রেতাদের অবস্থানে বড় ধরনের আঘাত হবে এবং তখন স্বর্ণের দর কমে $4,124-এ যেতে পারে, যা থেকে মূল্য আরও নিম্নমুখী হয়ে $4,062-এ পৌঁছানোর সম্ভাবনা তৈরি হবে।